মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রসূতি মায়েদের মৃত্যু অনেক বেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ভারতীয় বা ডেল্টা ধরন দেশে বিস্তারের পরই প্রসূতিদের মৃত্যুঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে বহুগুণ। অধিকাংশেরই অক্সিজেন লাগছে। আর যাদের আইসিইউতে নেওয়া হচ্ছে, তাদের মধ্য থেকে খুব কমসংখ্যকই ফিরছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রসূতি মায়েদের টিকা প্রয়োগ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে নারী, বিশেষ করে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুহার শীর্ষে। গত সপ্তাহ থেকে হাসপাতালটির আইসিইউতে করোনা আক্রান্ত যেসব নারীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৬১% ছিলেন প্রসূতি।
চিকিৎসকরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। তাই যেকোনো ফ্লু বা অন্য কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার বুক–পেটের মধ্যের ডায়াফ্রাম নামক পর্দাটি এ সময় একটু ওপরের দিকে উঠে যায় বলে স্বাভাবিকভাবেই শ্বাসকষ্ট হয়। সংক্রমণের জন্য সাধারণ মানুষের তুলনায় গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট বেশি হতে পারে। তাই করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের পরিস্থিতি দ্রুত জটিল আকার ধারণ করে।
আরও পড়ুন:
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো যেখানে বলছে- প্রেগন্যান্ট বা দুগ্ধদানকারী মা টিকা নিতে পারবেন, সেখানে সরকার সেই প্রথম থেকে এই দুই শ্রেণির নাগরিকদের টিকা দেওয়া থেকে বিরত আছে। ইতোমধ্যে করোনার ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েরা হাইরিস্ক জোনে আছেন এবং অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। এমতাবস্থায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ চাইলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) সার্জারি বিভাগের একজন আবাসিক চিকিৎসক বলেন, ‘সাত দিনের ব্যবধানে আমার তিনজন অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। পরিচিত আরও চারজন এমন অবস্থায় আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।’
ঢামেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. জামাল বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি হাসপাতালই করোনা রোগীতে পরিপূর্ণ। এ অবস্থায় আমরাও প্রসূতি মায়েদের খুব বেশি জরুরি না হলে হাসপাতালে যেতে নিষেধ করি। কারণ সেখানে গেলেই তো করোনা আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের তো যেতেই হয়, না গিয়ে তো কোনো উপায় থাকে না। সেক্ষেত্রে তারা আরও বেশি বিপদে পড়েন। আমরা দেখেছি, বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও সাংবাদিক গর্ভকালীন সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বেশ কজন মারাও গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাদের সার্জারি এবং গাইনি রোগীদের জন্য বার্ন ইউনিটে আলাদা কোভিড ইউনিট রয়েছে। সেখানে ৬২টি শয্যা রয়েছে। গত এক মাস ধরে প্রতিটি শয্যা রোগীতে পরিপূর্ণ দেখছি। এগুলো কোনভাবেই খালি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আগে এত রোগী ছিল না। ডেল্টা ধরন আসার পর রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আমাদের জন্যও বিষয়টা সামলানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।’
ঢামেক হাসপাতালের এ চিকিৎসক বলেন, ‘এবার করোনা আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন বেশি লাগছে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রসূতিদের অনেকেই মারা যাচ্ছেন। আগে হয়তো আক্রান্ত হলেও এতটা অক্সিজেন-নির্ভরতা ছিল না। আর প্রেগন্যান্ট রোগীদের যখন অক্সিজেন-নির্ভরতা প্রয়োজন হয়, তখন কিন্তু তাদের তীব্র আকারে সমস্যা দেখা দেয়। আমরা আসলে এ মুহূর্তে নিজেরাও বুঝতে পারছি না পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে।’
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত