বুধবার, ১০ আগস্ট ২০২২
তোমরা যারা কবিতা লিখতে আসো,
মনখারাপের মরশুমেই কেন আসো?
তোমরা যারা কবিতা লিখতে আসো,
দীর্ঘ রাতের একাকিত্বেই কেন আসো!
আমার ইনবক্সজুড়ে, আমি তোমাদের পরিচিত মহিলা-কবিটি নই!
ফোনের ইনবক্স আর মনের একটু ভিতরের দিকে গেলেই,
আমি ভীষণ সাধারণা।
স্বীকার করিঃ আর পাঁচজন নারীর মতোই,
আমিও ব্যক্তিগত জীবন দশ-বারোটা অধ্যায় যাপন করি—
কারোর মা, কারোর সহোদরা, বান্ধবী বা সন্তানতুল্য…
এমনকি কারোর প্রাক্তন কিংবা বিনাকারণের শত্রু;
কিন্তু আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা লিখতে জানলেও,
কখনই কবি হতে চাইনি।
আমি ব্যাকরণ জানা বুদ্ধিমতীটি নই,
কবিতার দিদিমণিও নই আমি
আমার মনে-মনে শুধুই
একটা প্রেম-করতে চাওয়া কিশোরীকে লালন করি।
আমার লিখতে পারার দক্ষতা
আমার প্রেমিকা হতে পারার বৈশিষ্টকে
ছাপিয়ে যেতে-যেতে যেতে-যেতে…
এখন আমি শুধুই সবার ‘আপনি ভালো লেখেন’ হয়ে রয়ে গেছি;
আর তোমরা যারা কবিতা লিখতে আসো,
প্রেমিক হয়েও আমায় শুধুই শ্রদ্ধা করতে আসো!
শ্যামলা গায়ে রঙ, চোখের চশমা বা গায়ের ঘন লোমের চেয়ে
বেশি তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়ি তাদের,
যাদের শব্দ দিয়ে জাদু করার ক্ষমতা আছে।
শব্দের কাবুলিত্তয়ালারা আমায় নিমেষে নগ্ন করতে জানে,
খুব গভীর থেকে কাঙ্গাল প্রেমিকাকে
হেঁচড়ানি দিয়ে বের করে আনে।
আমিও রোজ হাজারের ওপর শব্দ ব্যয় করার পরও,
কারোর কবিতার উত্স হতে চাই।
আমি পুরুষের কবি হওয়ার কারণ হতে চাই!
রবীন্দ্রনাথও লেখক শরতের সাধাসিধে মেয়েটি হওয়ার ভিক্ষা চেয়েছে;
আমি তো তুচ্ছ কটা ছন্দহীন শব্দকোষ বুনতে জানি, মাত্র!
তোমরা যারা আমার কাছে কবিতা লিখতে আসো,
রোজ কত পদ্য লেখো, তবু উৎসর্গ অন্য।
রোজ কত প্রবন্ধ-লেখক প্রেমিকার গল্প শোনায়
আমায় রোজ কত বিপ্লবী প্রেমের গান লিখে দেখায়…
তোমাদের সবার প্রেমিকা হয় কেউ না কেউ,
কারোর আবার ‘প্রেয়সীই বিপ্লব’
শুধু তোমরা কেউ আমার প্রেমে পড়ো না।
তোমাদের কবিতারা আমার প্রশংসা পায়,
পায় আমার উৎসাহ শুধু কবি,
তোমার আমার জন্য প্রেম পায় না!
তারপর কবিতা শেষে তুমি চলে যাও
কয়েশোখানা ‘দারুণ হয়েছে‘ সম বিশেষণ নিয়ে
আমি শুধু থেকে যাই, আরেকটা প্রেমে— আঁচড় খেয়ে।
তোমরা যারা কবিতা লিখতে আসো,
আমার আগামী কবিতা হয়ে চলে যাও
আর পড়ে থাকে একটা সাধারণা, যারা সদ্য একতরফা ভেঙেছে।
© 2022 - Deshbarta Magazine. All Rights Reserved.